আজকে ভাবছিলাম দিনযাপন লিখবো না … একে তো মন মেজাজ ভালো নেই, তার ওপর সকালে একটা কাজ সাবমিট করতে হবে। কাজটা নিয়ে বসছিলাম, কিন্তু মনে হলো যে যতটুকু আর বাকি আছে সেটা সকালে তাড়াতাড়ি উঠে শেষ করে ফেলা যাবে। ঘুমিয়ে যাবো ভাবছিলাম। কিন্তু যেহেতু এখনো ঘুম আসে নাই, সেহেতু সময়ের সদ্ব্যবহার করতে দিনযাপন লেখা শুরু করলাম …
গত ক’দিন ধরেই এমন হচ্ছে যে আমি প্রচণ্ড ক্লান্ত বোধ করছি, কিন্তু রাতে কিছুতেই ঘুম আসছে না … ভোর পাঁচটা ছয়টা বেজে যাচ্ছে, কিন্তু ঘুমের নামগন্ধ নাই … তারপর হয়তো ৭টা কি সাড়ে ৭টার দিকে ঘুমাচ্ছি … কাজ থাকলে ৯টা/ ১০টার মধ্যেই উঠে যাচ্ছি, নয়তো ১২টা/১টা পর্যন্ত ঘুমাচ্ছি … আর ফলাফল হিসেবে সারাদিনের জন্য মাথাব্যথা ফ্রি পাচ্ছি … এই একই সমস্যা আরও কয়েকজনের কমবেশি হচ্ছে শুনলাম … প্রচণ্ড গরমের জন্যই কি না কে জানে …
যেই গরম, সারাদিন তো গায়ের ঘাম গায়েই লেগে থাকে … গোসল করেও শান্তি নাই … একে তো চুল শুকানোর আগেই ঘামে ভিজে চুপচুপা হয়ে যায়, তার মধ্যে গোসল করে বের হয়ে কাপড়চোপড় পরার আগেই আবার সারা শরীর ঘেমে যায় … বাথরুমেও মনে হয় ফ্যান বা এসি’র বন্দোবস্ত করতে হবে কয়েকদিন পরে! …
ঠিক এই মুহুর্তে অবশ্য বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে … কিছুক্ষণের জন্য প্রকৃতি ঠাণ্ডা হবে অন্তত …
আজকে একটা নাটক দেখলাম। মনিপুরী বিষ্ণুপ্রিয়া ভাষার নাটক, নাম ‘লেইমা’ । একটা বিদেশী গল্পের অ্যাডাপ্টেশন। নাটকটা দেখতে গিয়ে মন মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো … ঠিক এই মুহুর্তে, গত কয়েকদিন যাবৎ যেই বিষয়গুলো নিয়ে প্রচণ্ড ডিস্টার্বড, যেই বিষয়গুলো প্রচণ্ড ব্যস্ততার উছিলায় সারাদিন ভুলে থাকার চেষ্টা করছি, ঠিক সেই বিষয় নিয়েই একটা নাটক এখনই আমার দেখা হলো! … নাটকটা আমার মনোযোগ দিয়ে দেখা হয়নি … বারবারই নিজেকে অনেক কষ্ট করে সামলে রাখছিলাম যে নিজের ভেতরের দুঃখবোধটাকে কিছুতেই নাটকের সাথে মিলতে দেয়া যাবে না … কিন্তু সেটা আমি পারি নাই … এমনকি চোখের পানিটাও আটকিয়ে রাখতে পারিনি … অনেককিছুই খুবই প্রকটভাবে মিলে গেলো নিজের সাথে … আর সাথে সাথেই সারাদিন ধরে চেপে রাখা চিন্তা আর অনুভূতিগুলাও জাগ্রত হয়ে গেলো … কেন যে নাটকটা দেখতে গেলাম! … গ্রুপের দিকেই যাচ্ছিলাম, হঠাৎ জবা দি’র ফোন পেয়ে নাটক দেখতে চলে গেছি … গ্রুপে চলে গেলেই হতো! … সবার সাথে আজাইরাই হা হা হি হি করা হতো, যেটা হাসির না সেটা নিয়েও হাসতাম, যেটা ফাজলামির না সেটা নিয়েও ফাজলামি করতাম … মন খারাপ থাকবার কোনো অপশনই থাকতো না …
এই কয়েকটা দিন কেন যে চোখের পলকে শেষ হয়ে যাচ্ছে না … যতই সবকিছু ভুলে থাকতে চাইছি, ততই এটা সেটা ঘটনা বিষয়গুলোকে আরও বেশি করে মনে করতে বাধ্য করছে …
রিপ ভন উইঙ্কল -এর মতো কয়েকটা দিন ঘুমিয়ে উঠতে পারলে হতো … ঘুম থেকে উঠে দেখতাম ১০/১৫ টা দিন চলে গেছে … তারপর আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠে সবকিছু ভুলে গিয়ে একেবারে নতুন করে দিন শুরু করতাম … পেছনের সবকিছু পেছনেই পড়ে থাকতো …
কিন্তু আসলে সেটা হয় না … পেছনের স্মৃতিরাই বারবার সামনে আসে … ফিরে ফিরে আসে একাধিকবার করে …
আর আমি ভাবি, তাই যদি হয়, তাহলে সবকিছু নীরবেই কেন সয়ে যাবো? … দিনযাপনে আমি যথেষ্ট সরব … কিন্তু সেই সরবতাটা যদি আরও কয়েক ডেসিমাল বাড়িয়ে দেই, তাহলে সেটার সহ্য ক্ষমতা সবার থাকবে তো? …
অবশ্য, এখন আমাকে স্মৃতিগুলোই খোঁচায়, অনুতাপগুলোই খোঁচায় … ব্যক্তিমানুষটাকে নিয়ে আমার মনে কোনো অনুভূতি নেই … তার কি হলো তাতেও আমার কিছু আসে যায় না … তার আশেপাশের মানুষদের কি হলো তাতেও না! … এখন আমি কাউকে হারানোর ভয় করি না … কারণ আমার এখন আর নতুন করে হারানোর কিছু নেই … যা আছে, জানি সেটুকুই থাকবে … না থাকলেও নাই …
আর যা হারিয়ে গেছে, তার আনুষঙ্গিক আর সবকিছুই হারিয়ে গেলেও আমার তাতে কিছুই যাবে আসবে না …
কিছুই না …