সকালবেলাই গতবছরের এই দিনে লেখা দিনযাপনে চোখ বুলাতে গিয়ে দেখলাম যে উইথড্রয়াল সিনড্রম নিয়ে লিখেছিলাম। আর আজকেও ঠিক সেই উইথড্রয়াল সিনড্রম নিয়েই দিন কাটালাম …
সকালবেলা তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠলাম যে বিবিসি’র দুইটা স্ক্রিপ্ট পাঠানোর আছে, সেগুলার কাজ শেষ করে পাঠিয়ে তারপর সারাদিনের জন্য নিশ্চিন্তে বের হয়ে যাবো। একটা স্ক্রিপ্ট কমপ্লিট ছিলো, ভাবলাম সেটা একটু রিভাইস দিয়ে রেডি করে ফেলি। তখন আবিষ্কার করলাম যে দুইদিন আগে প্রায় দুই ঘণ্টা যাবত কানে হেডফোন গুজে অডিও শুনে শুনে যেই স্ক্রিপ্ট-টার কাজ করলাম, সেটার কিছুই সেভ হয়নাই। আসলে ঘটনা যেটা হয়েছে যে অনেক্ষণ কাজ করার পর নেটবুক কিঞ্চিৎ হ্যাং হয়ে যাওয়ায় আমি সেটা ফোর্স শাটডাউন দিয়ে আবার চালালাম। যেহেতু হ্যাং হয়ে যাওয়ায় সেভ-ও করতে পারছিলাম না, সো রিকভারি ফাইল হিসেবে ওটা সেভ করার অপশন আসলো যখন নেটবুক চালু হলো। আর আমিও বেকুবের মতো কি মনে করে ‘সেভ রিকভারি ফাইল?’ প্রশ্নের উত্তরে ‘নো’ দিয়ে ফাইল ক্লোজ করে দিয়ে উঠে গেলাম! এবং তখন যে আসলে সব কাজ শুদ্ধাই ফাইলটা হাপিশ হয়ে গেছে সেইটা রিয়েলাইজ করলাম আজকে সকালে! … আর সাথে সাথেই আমার মধ্যে আবার কেমন একটা উইথড্রয়াল সিনড্রম কাজ করা শুরু করলো! বিবিসি’র কাজ বাদ দিয়ে বসে বসে ফেসবুক গুতালাম, ট্র্যাজেডি পলাশবাড়ির স্ক্রিপ্ট এডিট-এর কাজ করলাম … তারপর নিশাত আসলো বাসায়, আর আমিও রেডি হয়ে বের হয়ে গেলাম! …
যাই হোক, আজকে রাতে কাজ শেষ করে দিতে হবে … ইন অ্যানি ওয়ে …
আজকে সারাদিনের ঘটনার সারমর্ম এই যে আজকে নিশাতের সাথে বের হয়ে গুলশানের দিকে একটা কাজে যাওয়ার কথা, তারপর সেখান থেকে নিশাত, তৃষা, মিন্নিসহ দুপুরে একসাথে লাঞ্চ করা। উছিলা নিশাতের জন্মদিন …
তো, আমাদের দুপুরে সবার একসাথে বসে লাঞ্চ করা হলো ঠিকই, কিন্তু কাজের কাজ আর তেমন কিছু হলো না … আফটার লাঞ্চ কিঞ্চিৎ উইন্ডো শপিং ছাড়া …
তবে আজকে সারাদিন ছিলো ধরা খাওয়ার দিন …
সকালে বিবিসি’র কাজের কথা তো বললামই … তারপর আমি আর নিশাত পিঙ্ক সিটি’র উদ্দেশ্যে সিএনজি নিয়েও শেষমেশ জ্যামে আটকে থেকে যখন গুলশান ২ নাম্বারের কাছে পৌছালাম, তখন অলরেডি লাঞ্চ টাইম। আর মিন্নি অফিস থেকে বের হয়ে ঘন্টাখানেকের জন্য দেখা করতে আসবে বলে আমাদের দেরি করারও উপায় নাই। ফলে পিঙ্ক সিটি প্রজেক্ট বাদ দিয়ে আমরা সরাসরি লাঞ্চ প্রজেক্টেই চলে গেলাম। বসলাম ‘কেনি রজার্স রোস্টার’-এ। মিন্নির অফিস থেকে মিনিট পাঁচেক-এর দূরত্ব, তাই ও দ্রুত চলে এলো, তৃষা ওর ভার্সিটির ক্লাস শেষ করে বের হয়ে পথে। তো, কেনি রজার্স-এ আরেক দফা ধরা খাওয়া! কোনো খাবার খেয়েই মজা পেলাম না। মজা পেলাম না বলতে লিটেরালিই মজা পেলাম না! তবুও, বসে গেছি, অর্ডার দিয়ে দিয়েছি, এতগুলা টাকা বিল আসবে এইসব ভেবে খেয়ে ফেলা হলো … সিএনজি-তে বসে আমি আর নিশাত আলোচনা করছিলাম যে ফিশ অ্যান্ড কোঃ তেও তো যাওয়া যেতে পারে। পরে অন্য দুইজন মাছ খাবে কি খাবে না ভেবে আর সেইটা প্রস্তাব করা হলো না। আর তারপর কেনি রজার্স-এ খেতে বসে মনে হতে লাগলো যে ফিশ অ্যান্ড কোঃ এর প্রস্তাবটাই হয়তো ভালো হতো! …
তো খাওয়া শেষে মিন্নি আবার অফিসে চলে গেলো। আর আমরা বাকি ৩জন কেনি রজার্স-এ বসেই বেশ অনেকটা সময় কথাবার্তা বলে বের হয়ে আশেপাশের এক্টা-দুইটা দোকানে একটু ঢুঁ মারলাম ; মায়াসির, বাটা, নিউ জরোয়া হাঊজ, কুমুদিনী ইত্যাদি ইত্যাদি … গুলশান ১ এ নর্থ এন্ড কফি রোস্টার –এর ব্রাঞ্চ খুলেছে দেখে আগ্রহী হয়ে ওখানে কফি খেতে গিয়ে আরেক দফা ধরা! … যেই আইডিয়া নিয়ে ওদের ফ্রোজেন কফি অর্ডার দিলাম, দেখা গেলো তা আমাদের আইডিয়ার চাইতেও বহুগুণ হতাশাজনক! ক্রিমসন কাপ কফি-তে বা কফি ওয়ার্ল্ডে ফ্রোজেন কফি বলতে যা খেয়েছি, সেইটা হয় অনেক হেভি, অনেক ঘন। আর এখানে ফ্রোজেন কফি খেতে গিয়ে মনে হলো যে ঠান্ডা পানি দিয়ে কফি গুলিয়ে দিয়ে দিয়েছে! নর্থ এন্ড এর কফি বরাবরই আমার অনেক পছন্দের, কিন্তু আজকে যারপরনাই হতাশ হলাম! আসলে ধরা খাওয়া কপালে থাকলে যা হয় আর কি! ঠাণ্ডা কফি না নিয়ে ইউজুয়াল গরম কফি নিলেই হয়তো ভালো হতো!
কফি খেয়ে বের হয়ে তৃষা আর নিশাত সিএনজি নিলো। নিশাত মোহাম্মদপুর যাবে আর তৃষা শ্যামলীতে নেমে যাবে। আর আমি যাবো শিল্পকলা অ্যাকাডেমি। তো, এমনিতেই রাস্তায় যেই জ্যাম, অর্ধেক রাস্তা তো বসেই থাকতে হতো সিএনজি-তে। একা একা আলাদা সিএনজি-তে বসে থাকার চাইতে মনে করলাম যে ওদের সাথে কিছুটা পথ যাই, তারপর সুযোগমতো কোথাও নেমে আরেকটা সিএনজি নিয়ে নেবো। কিসের কি! যেই জ্যাম, দেখা গেলো গুলশান ১ থেকে মহাখালী আমতলী পর্যন্ত যেতেই ১ ঘণ্টা পার হয়ে গেলো! জ্যামে বসে থাকতে থাকতে আমারও শিল্পকলা অ্যাকাডেমি পর্যন্ত আবার আরেকটা সিএনজি নিয়ে মগবাজার ফ্লাইওভারের জ্যাম ঠেলে আর যেতে ইচ্ছা করলো না … ভাবলাম যে যাবো না … আবার মনে হলো যে না গেলে বিষয়টা কেমন দেখায়! রানা আর সজীব-এর সাথে তো একটা গ্রুপ ওয়ার্ক আছে, সেইটারও বা কি হবে? … এতটা ইরেসপনসিবিলিটি দেখানো কি ঠিক হবে? তখন ভাবলাম যে বিজয় স্মরণি দিয়েই তো বের হবে, আমি না হয় বিজয় স্মরণি মোড়ে নেমে ফার্মগেট দিয়ে চলে যাবো। কিসের কি! যখন বিজয় স্মরণি মোড়ে পৌঁছেছি তখন বাজে ৮টা! তখন মনে হলো যে এখন আর শিল্পকলা গিয়েই লাভ কি? ওয়ার্কশপের কাজ তো শেষ হয়ে যাবে ৯টা বাজলেই! আর যেই জ্যামের আলামত দেখলাম, তাতে ফার্মগেট থেকে শিল্পকলা পর্যন্ত যেতে হয়তো ৯টাই পার হয়ে যাবে! তখন এই চরম উইথড্রয়াল ফিলিং-এর চোটে বাসায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে তৃষাদের সাথেই সিএনজি করে আগারগাও পর্যন্ত এগিয়ে গেলাম। তারপর সেখান থেকে রিকশায় সোজা বাসা!
শিল্পকলায় যেই ওয়ার্কশপটায় যাওয়ার কথা, সেটায় না যাওয়ার পেছনে সকাল থেকে শুরু হওয়া উইথড্রয়াল সিনড্রমের-ও একটা প্রভাব আছে। কারণ আমি গুলশান থেকে যদি ৪টা নাগাদ বের হয়ে যেতাম, তাহলে খুব আরামসেই সাড়ে ৫টার মধ্যে শিল্পকলা চলে যেতাম। কিন্তু আমি তো রওনাই দিলাম ৬টা সময়! … আসলে ওয়ার্কশপটা থেকে কেমন জানি মনই উঠে গেছে গতকালকে! ওয়ার্কশপটার কন্টেন্ট আর কনডাকটর যতটা ইন্টেরেস্টিং, পার্টিসিপেন্টরা ততই বোরিং! সবাই কেমন জানি নিজেদেরকেই খুব কষে দেখাতে ব্যস্ত! অথচ কলাম্বিয়ান ভদ্রলোক যেই অ্যাক্টিং মেথড নিয়ে কাজ করাচ্ছে, সেটা নিয়ে কারো গরজ নাই! একটা স্ক্রিপ্ট-এর এক পাতা থেকে অভিনয় করে দেখাতে বললো, আর একেকটা দল আসল জিনিস না দেখিয়ে এমনই অ্যাক্টিং দেখালো যে ওইটার সাথে কলাম্বিয়ান ভদ্রলোকের সাজেসটেড অ্যাক্টিং মেথডের কোনো সম্পর্কই নাই! উনি বলে ইম্পালসিভ অ্যাকটিং-এর কথা, ইমাজিনেটরি ভিজ্যুয়ালের কথা, মেক বিলিফ পারফরমেন্স-এর কথা … আর একেকজন ‘মুই কি হনু রে’ অভিনয়ে ব্যস্ত! … কেমন জানি বিরক্তই লাগলো আমার কাছে! … আর বিরক্তিও ‘কি হবে যেয়ে’ টাইপ চিন্তার উদ্রেককারী …
যাই হোক, ভেবেছিলাম অনেক কিছু নিয়ে লিখবো। কিন্তু যেই লেভেলের ঘুম আসছে, তাতে আর বসে থাকা সম্ভব নয়। ক্ষুধাও লেগেছে প্রচুর … কিন্তু ঘুমানোর চেয়ে জরুরি এই মুহুর্তে কিছুই মনে হচ্ছে না … কালকে সকালে অনেক অনেক কাজ … খুব ভোরে উঠতে হবে … কালকে আরো অনেক অনেক কাজ … বিবিসি … স্কুল … টিউশনি … গ্রুপ … অনেকগুলা কাজ …
সো, আজকে দিনযাপন এখানেই শেষ করছি …