মাঝে মাঝে আমার খুব অদ্ভুত ধরণের একটা মাথা ব্যথা হয় …মনে হয় যেন কেউ মাথার ওপর চেপে বসেছে, কিংবা হাত দিয়ে জোরে চাপ দিয়ে রেখেছে মাথায় … সেই সময় আমার কেমন একটা ঘোরের মতো লাগে … তখন খুব ঘুম পায় … আর ঘুমিয়ে পড়লে আমি খুব অদ্ভুত ধরণের স্বপ্ন দেখি … জেগে জেগে স্বপ্ন দেখার মতো … মনে হয় যেন আমি আসলে ঘুমাই না, সাবকনসাস একটা লেভেলে থেকে ট্র্যান্স মোডে চলে যাই! … স্বপ্নগুলো দেখতে আমার ভালো লাগে! … অনেক কিছুই আমার জেগে উঠে আর মনে থাকে না … কিন্তু আমার স্পষ্ট অনুভূতি হয় যে আমি হয়তো কখনো ইচ্ছা করলে স্বপ্ন দেখতে দেখতেই সেই দৃশ্যগুলো বর্ণণা করে দিতে পারবো! সেই সময়টায় আমার ঘুম হয় ভেঙ্গে ভেঙ্গে … স্বপ্ন দেখতে দেখতে মনে হয় অনেকটা সময় পার হয়ে গেছে, আর চোখ খুলে দেখি হয়তো ৫ মিনিটও যায়নি … খুব অদ্ভুত একটা অনুভূতি! …
আজকে দুপুরেই যেমন প্রচন্ড মাথা ব্যথা নিয়ে ঘুমিয়ে গেলাম … ঘুমিয়েছি বলতে এই অর্ধচেতন তন্দ্রায় ছিলাম প্রায় ঘণ্টা দেড়েকের মতো … কী কী দেখেছি স্বপ্নে তার অনেক কিছুই আমার মনে নেই … গিজার ছেড়ে পানি গরম করতে দিয়ে শুয়েছি … স্বপ্নের মধ্যে আমি বারবার এই গিজারের পানি গরম হলো কি না সেটা নিয়েই ভাবতে ভাবতে জেগে উঠছিলাম … ঘুমিয়েছি যখন, তখন ভরদুপুর … আর স্বপ্নে দেখছিলাম যে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে বিকাল ৫টা বাজিয়ে ফেলেছি … এর মধ্যে বৃষ্টিও নেমেছে … ফ্যান ছেড়ে রাখার কারণে ঠাণ্ডা লাগছিলো অনেক, সেই ঠাণ্ডার অনুভূতিটাই বৃষ্টি বলে ফিল হচ্ছিলো বোধহয় … দেখলাম মা-ও কলেজ থেকে ফিরে এসেছে … আমি ভাবছি যে ৫টা বেজে গেলো, স্কলাস্টিকায় এখন কতক্ষণে পৌছাবো … তারপর হঠাৎ চোখ মেলে দেখি আসলে বেলা ৩টা বাজে মাত্র, মা-ও ফেরেনি … অথচ স্বপ্নের সবকিছুই মনে হচ্ছিলো যেন আসলেই ঘটছে … আরেকবার চোখ লেগে যাবার পর দেখলাম সিনেমা দেখতে গেছি … তাও আবার টিয়াম, মা আর আমি! টিয়াম আবার কারো সাথে কিছু আলাপ না করেই কি একটা সিনেমার টিকিট কেটে ফেলেছে … সেই সিনেমা আবার খুবই বাজে … আজাইরা সেক্সুয়াল কন্টেন্ট দেখানো কিছু সাইকো-থ্রিলার হয় না, ঐরকম একটা সিনেমা! মিনিট দশেক দেখে আমরা আবার বের হয়ে আসলাম … টিয়াম টিকিট ফেরত দিতে গেলো … আমি আবদার করলাম কুংফু পান্ডা থ্রি দেখবো … এর মধ্যেই আবার তন্দ্রাভঙ্গ … তারপরের স্বপ্নটার অনেককিছুই মনে নাই … কেন আমি অদ্ভুত রকমের একটা মরুভূমির মধ্যে এসি-ফিট করা সিমেন্ট বাঁধানো ঘরের মধ্যে ছিলাম সেইটা জানি না … ওই স্বপ্নের আগা-মাথাও কিছু মনে নাই … খালি মনে আছে একটা অদ্ভুত রকমের সুন্দর আকাশ দেখেছি! … তারাভরা রাতের আকাশ … কিন্তু কি যে সুরিয়ালিস্টিক! … বড় বড় ছায়াপথগুলো সব কাছ থেকে দেখা যাচ্ছে … তারাভরা আকাশের পেছনে আরেক লেয়ার আকাশ উঁকি দিচ্ছে! সেই আগুনরঙ্গা আকাশে আবার কিছুক্ষণ পর পর বিদ্যুতের ঝলকানি দেখা যাচ্ছে! আর নিচের তারাভরা আকাশের আস্তরটা যেন এক্টু ট্রান্সপারেন্ট আর ফাটা ফাটা … ফলে স্বচ্ছ কালো আকাশের পেছনে ওই আগুনরঙ্গা আকাশের বিদ্যুৎ ঝলকানিই বেশি দেখা যাচ্ছে! … কি যে অদ্ভুত এক দৃশ্য! … আমার স্বপ্ন দেখতে দেখতেই মনে হচ্ছিলো যে এই দৃশ্যটা যদি আমি ছবি এঁকে রাখতে পারতাম! কিংবা আমি যদি গ্রাফিক্স অ্যানিমেশন পারতাম তাহলে সেভাবেও তৈরি করতে পারতাম! … কিন্তু এই দৃশ্য আঁকার মতো দক্ষতা যেমন আমার নেই, তেমন নেই অ্যানিমেশনের ক্ষমতাও! … স্বপ্নে দেখা দৃশ্যটা আসলে মনের মধ্যেই গেঁথে থাকবে! … তো এই স্বপ্নটা দেখতে দেখতে যখন ঘুম ভাংলো তখন দেখি মাত্র সোয়া ৩টা বাজে … সাথে সাথেই উঠে গেলাম … কারণ এইরকম আকাশ দেখার পর আর কিছুই দেখতে ইচ্ছা হচ্ছিলো না! …
এই মাথা ব্যথার একমাত্র রিমেডি গোসল করা … অন্তত আমার জন্য … গোসলের সাথে সাথে মাথার ওপরে কেউ চাপ দিয়ে রাখার অনুভূতিটা চলে যায়! … এই মাথা ব্যথাটা শুরু হয়েছে বছর দেড়েক হলো … তার আগেও হতো, কিন্তু মাথা ব্যথার সাথে সাথে এই তন্দ্রা আর অর্ধচেতন স্বপ্ন থাকতো না … প্রথম প্রথম এই মাথা ব্যথাটা আমার ভালো লাগতো না … কিন্তু শুধুমাত্র স্বপ্ন দেখার নেশাতেই ভালো লাগে! … মাঝে মাঝে এমনও হয়েছে যে ইচ্ছা করে দুই/তিন দিন চুল ভিজিয়ে গোসল করি নাই, যাতে মাথা ব্যথাটা থাকে! …
তবে, মাথা ব্যথা ছাড়াই গত দুই/তিন দিন যাবৎ বেশ মনে রাখার মতো স্বপ্ন দেখছিলাম … আর সবগুলো স্বপ্নই কেমন ‘লেফট আউট’ হয়ে যাওয়ার স্বপ্ন! …
একদিন দেখলাম যে প্রাচ্যনাটের কি একটা গেট টু গেদার হয়েছে, সেখানে আমি গিয়েছি অনেক দেরিতে … এবং যাওয়ার পর দেখা গেলো যে সবাই সবার মতো এঞ্জয় করছে, কিন্তু আমি কোনো সার্কেলেই ঢুকতে পারছি না! এদিকে গেট-টুগেদার যেখানে হচ্ছে সেই লোকেশনটা আবার সেন্ট্রাল রোডের বাসার কম্পাউন্ডের মতো লাগলো! সেখানে একদল বাসার ছাদে, আরেকদল নিচে! আমি যখনই ভাবছি যে আমি ছাদে না থেকে নিচে গান-বাজনা-হই-হল্লার মধ্যে যাই, তখন দেখলাম সবাই বেরও হয়ে যাচ্ছে … আমি ভাবলাম যে গোপীকে আটকাই … সিএনজি পেতে হলে তো একা একা হাঁটতে হবে অনেকক্ষণ, গোপীকে না হয় বলি সাথে থাকতে … তো, ও নিচে ছিলো, ওকে বললাম থাকতে … আমি ওপর থেকে নামতে নামতে দেখলাম ও চলে যাচ্ছে … ভাবলাম যে ওকে যেহেতু বলার সুযোগ হয় নাই যে কেন থাকতে বলেছি, ও হয়তো তাড়া আছে বলে চলে গেছে … এর মধ্যে সাদিকে দেখে মনে হলো যে ও যেহেতু আছে, তাইলে তো হইলোই! এদিকে সাদিও দেখি একটা পিক-আপে চড়ে চলে যাচ্ছে! ও নাকি খেয়ালই করে নাই যে আমি আছি! … এরপরে আরো কি কি দেখছিলাম … কিন্তু মূল অনুভূতিটা ছিলো ‘বিয়িং লেফট আউট’ …
গতকালকেও কি জানি হাবিজাবি দেখতে একপর্যায়ে দেখলাম যে তৃষার সাথে কোথাও যাবো … একটা বাস আসলো … ও বাসে উঠে গেলো, আর আমি যেই বাসে উঠতে গেলাম অমনি বাসের গেট লাগিয়ে দিলো … বাসটা চলে গেলো, আর আমি দাঁড়িয়েই রইলাম … আবারো লেফট আউট!
আমি কখনোই কারো সাথে খুব ডিপ ইন্টিমেসি রেখে মিশি না, কোনো নির্দিষ্ট সার্কেল মেইন্টেইন করি না … তবুও এই লেফট আউট হয়ে যাবার ভয় কেন জানি আমার মধ্যে খুব প্রবলভাবে কাজ করে! … খালি মনে হয় একদিন ঘুম থেকে উঠে দেখবো দুনিয়া একদিকে আর আমি একদিকে! কোথাও কেঊ নেই! যখনই এমন মনে হয়, তখনি ভাবি যে কারো সাথে খুব ইন্টিমেট হওয়া যাবে না, পিছুটান রাখা যাবে না! সুতার বন্ধন যত কম থাকবে, ‘কোথাও কেঊ না থাকলে’ তখন খারাপ লাগাটাও কোম হবে … সবসময়ই একদম একলা একা চলার জন্য নিজেকে প্রস্তুত রাখি … তারপরও এই ভয় তাড়িয়ে বেড়ায় যে ‘লেফট আউট’ হয়ে যাবো! …
যাই হোক, সারাদিনের কর্মকান্ড বলতে তেমন কিছুই নাই … সকালে টিউশনি … বিকালে স্কলাস্টিকায় ছবি তুলতে যাওয়া … এদিকে বাসার পাশেই একটা আর্ট স্কুলের আর্ট কম্পিটিশন প্রোগ্রাম ছিলো আজকে… সেখানে আবার জলপুতুল পাপেটের শো ছিল … মূল টিমের কেউই যদিও আসে নাই … আসছে রফিক ভাই, ফরহাদ আর আদনান … একজনের জন্য হলেও আমি একটু দোনোমনো করছিলাম যে আদৌ যাবো কি না ওদের সাথে দেখা করতে … পড়ে ভাবলাম যে বাসার নিচেই প্রোগ্রাম, বারান্দায় দাঁড়িয়েই দেখা যাচ্ছে … না গেলে নিজের কাছেই কেমন লাগবে … স্কলাস্টিকা থেকে ফেরার পর সেকারণে আদনানকে ফোন করে শেষে দেখাসাক্ষাৎ করে আসলাম … পাপেটের শো যখন হয়েছে ওই সময় আমি থাকতে পারলে মজা হতো আরও … দেখা যেতো আমিও পাপেট হাতে স্টেজে উঠে গেছি! …
যাই হোক … আর কি! তিনদিনের ছুটি পেয়ে ঢাকা শহরের অর্ধেক মানুষ বেড়াতে চলে গেছে … আর আমি কোথাও যেতে পারলাম না! … ঢাকা শহরেই পড়ে আছি! … আবারো সিলেট ট্যুরের মতো একটা হুট-হাট ট্যুর দরকার … মাস্টার্সের ক্লাস শুরু হবার আগে রিফ্রেশ হয়ে নেয়া গেলো না এই ছুটিটায় …
কবে যে একেবারে মোবাইল শুদ্ধা বন্ধ করে-টরে কোথাও ঘুরতে চলে গিয়ে একটা ছুটির মতো ছুটি কাটাতে পারবো! …
দীর্ঘশ্বাস ! কেবল দীর্ঘশ্বাস! …
একমাত্র আমাকে কেউ কিডন্যাপ করে না নিয়ে গেলে এই ছুটি মনে হয় আর মিলবে না! …