মাসের ২০ তারিখ পার হয়ে গেলেই আমার টাকা-পয়সা সংক্রান্ত সকল দেনাদারদের কথা মনে পড়ে যেতে থাকে! কারণ, তখন হাত খালি হবার পথে থাকে, আর কোথা থেকে টাকা আসবে চিন্তা করতে করতে আমার মনে পড়ে যায় যে আমি কত মানুষের কাছেই না কত টাকা পাই! … কিন্তু, তারপরেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়ি এই ভেবে যে এই টাকাগুলো তো আসলে আমার আর চাওয়াও হবে না, পাওয়াও হবে না! … এই টাকা চাওয়ার ব্যাপারটাতে আমি এতটাই আনাড়ি যে নিজের টাকাটাও আমি চেয়ে নিতে পারি না! …
এই যেমন, জনৈক বড় ভাইয়ের কাছে ৫০০০ টাকা পাইতাম গত বছরের মার্চ মাসে … এই বছরের মার্চ মাস চলে গেলো, তার কাছে টাকা চাইতে চাইতে শেষে বিরক্ত হয়ে সকল প্রকার যোগাযোগই বন্ধ করে দিলাম … তাও সেই টাকা আর ফেরত পেলাম না! … যখনই টাকা চাইতাম, বলতো টাকা নাই … তার দুই/তিনদিন পরেই দেখতাম কোথাও খেতে যাবার চেক-ইন! যার ধার শোধ করার সময় টাকা থাকে না, অথচ খেতে গেলে টাকা হাতে চলে আসে, তাকে আর কিভাবে টাকার কথা বলি! মনেই হয় যে তার আসলে টাকা ফেরত দেয়ার কোনো গরজ নাই! … সো, ওই টাকার জন্য আমি আর কিছু বলিও না!
আরেকজন পরিচিত … উনিও খুব বিপদে পড়ে আমার কাছ থেকে ৫০০০ টাকা ধার নিলেন … মাস দুই পরে একদিন ফোন করে জানতেও চাইলেন কিভাবে টাকাটা ফেরত দেবেন … তারপর আর যোগাযোগ নাই! … আমিও তো মহানুভব মানুষ! টাকাটা দেয়ার কথা কিভাবে বলি ভাবতে ভাবতেই আর টাকাটা ফেরত চাওয়া হয় না … উনিও যোগাযোগ করেন না! …
সোহেলের কথা বাদ-ই দিলাম … ওই টাকাগুলো জীবনে আর ফেরত পাবো সেইটা স্বপ্নেও ভাবি না! … ও যদি কোনদিন এসে ৫ টাকাও ফেরত দিয়ে যায়, তাহলে ওই টাকা আমি সুন্দর দামী ফ্রেমে করে বাঁধিয়ে রাখবো ! এক আইফোনের জন্যই তো ওকে আমি প্রায় ৪০ হাজার টাকা দিয়েছিলাম … মাঝে মাঝে মনে হয় যে ওই আইফোনটাও যদি হাইজ্যাক করে নিয়ে আসা যেতো, তাও তো ৪০ হাজার টাকার কিছুটা ফেরত পেয়েছি ভেবে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো যেতো! তারপরেও সময়ে সময়ে যে টাকাগুলো নিয়েছে সেগুলা মিলিয়েও আরো হাজার ২৫/৩০ টাকা তো হবেই! … কিন্তু ওর কাছ থেকে ওই টাকা ফেরত চাইতে গেলে নিজেকেই ‘ছ্যাচড়া নাম্বার ওয়ান’ মনে হবে!
কয়েকদিন আগে মুগ্ধ মেইল পাঠিয়েছে যে ওয়েবসাইটের ডোমেইন রেজিস্ট্রেশনের অ্যাানুয়াল ফি দেয়ার টাইম চলে এসেছে, ওকে যেন অতি সত্বর ২০০০ টাকা পাঠাই যাতে সে আমার হয়ে টাকাটা দিয়ে দিতে পারে … একবার ভাবছিলাম যে রিপ্লাইটা দেই এভাবে যে সোহেলের কাছেই তো আমি কত টাকা পাই, ওর কাছ থেকেই নিয়ে নাও না কেন? সারাজীবন আমার ডোমেইন রেজিস্ট্রেশনের টাকা দিলেও তো সোহেলের কাছে আমার আরো অনেক টাকা পাওনা থেকেই যাবে! …
পরে ভাবলাম, থাক! ছ্যাঁচড়ামি না করি! …
এদিকে আরো দুই/একজনের কাছে আমি আসলে কত টাকা পেতে পারি সেইটা হিসাব করাও একসময় বন্ধ করে দিয়েছি! … ধরেই নিচ্ছি উনাদের নিজেরই মনে নাই! … সো, ওই টাকাও গন কেস! ধরা যাক কেউ একজন একটা ইন্সট্রুমেন্ট কিনেছে, তখন টাকা নিয়েছে, আর তারপর বন্ধুত্বের উছিলায় সেই ইন্সট্রুমেন্টের টাকা ফেরত পাবার বদলে আমি সেটার কন্ট্রিবিউটর হয়ে গেছি! … এখন সেই ইন্সট্রুমেন্ট বাজিয়ে গান হয়, আর আমি শুনে ভাবি, ‘আরে! আমি-ই তো এটা কেনার সময় টাকা দিয়েছিলাম! আমার দেয়া ইন্সট্রুমেন্ট বাজছে!’ …
কি লেভেলের ভোদাই হলে আমি এরকম করতে পারি টাকা-পয়সা নিয়ে পাঠক আশা করি এতক্ষণে বুঝে গেছে!
টাকা পয়সা নিয়ে এই মাসে এত কথা বলছি, কারণ এই মাসে এক জায়গা থেকে টাকা পাবো ভেবে অনেক টাকা খরচ করে ফেলেছি! … আসলে অনেক টাকাও বলা যায় না, বলা যায় হাজার সাতেক টাকা খরচ না করলেও পারতাম, কিন্তু ভেবেই নিয়েছি যে টাকা তো আসবেই, সো করেই ফেলি! … তাও কি করেছি সেই টাকা দিয়ে? অরুনদ্যুতি আপু শাড়ির টাকা পেতো, ভেবেছিলাম যে আগামী মাসে দেবো, কিন্তু উনি পহেলা বৈশাখের আগে টাকা দিলে ভালো হয় বললো, তাই আমিও নগদে ৫০০০ টাকা বের করে উনাকে দিয়ে দিলাম! … এদিকে দিনাজপুর যাবার আগে মোটামুটি হাজার তিনেক টাকার শপিং করলাম! রংপুরে গিয়ে প্রায় ৪ হাজার টাকার শতরঞ্জি কিনে ফেললাম! … নিশাতের সাথে রাশিয়ান কালচারাল সেন্টারের একটা মেলায় গেলাম, সেখানে মোটামুটি ২০০০ টাকার গয়না আর ১৫০০ টাকার শাড়ি কিনে ফেললাম কিছু না ভেবেই! … নায়ীমীকে ওর একটা ইমার্জেন্সিতে ২০০০ টাকা দিয়ে দিলাম … এইরকম করে ১২/১৩ তারিখের মধ্যেই আমার বেতনের সব টাকা শেষ! এই মাসে বিবিসি থেকে অনেকদিনের অনেকগুলা জমে থাকা ইনভয়েস মিলিয়ে একটা বড় অঙ্কের চেক পেয়েছিলাম … অলরেডি ওখান থেকে ১০,০০০ টাকা তুলে ফেলেছি! … ট্যুরে যাওয়ার আগে কিছুটা, আর আজকে কিছুটা! … কোথায় ভাবছিলাম যে টাকাটা জমালে ঈদের সময় একটা ট্যুর দেয়া যাবে বাইরে কোথাও, কিন্তু সে আশায় মনে হচ্ছে এখন গুড়ে বালি হবে!
তো, এই মাসে টাকা সংক্রান্ত এই দুষ্ট চক্র কীভাবে তৈরি হলো? …
সুরের ধারার যে কাজটা করালাম, আমি তো ধরেই নিলাম যে টাকা-পয়সা তো কিছু হলেও দেবেই, সুতরাং ট্যুর থেকে ফিরেই ওই টাকাটা পেলে আমার মাসের বাকি কয়েকটা দিন দিব্যি কেটে যাবে! কিন্তু আমি তো বিশিষ্ট ভোদাই! আঁখি আপু যখন এসে জিজ্ঞেস করলো কাজ করবো কি না, তখন বললাম করবো, কিন্তু স্মার্টলি জিজ্ঞেস করতেই ভুলে গেলাম যে কত টাকা দেবে কিংবা আদৌ টাকা দেবে কি না! … তারপর নাখে-মুখে স্কুল করে, ক্লাস করে এর ফাঁকে ফাঁকে নিজেকে বিশ্রাম না দিয়ে কাজটা করলাম, শো-টাও হলো, কিন্তু টাকার কথা তো কেঊ বলে না! এখন আমিও নিতান্তই চক্ষুলজ্জায় লজ্জিত হয়ে আঁখি আপুর সাথে প্রতিদিন দেখা হওয়া সত্ত্বেও জিজ্ঞেস করতে পারি না যে কাজটা যে করলাম, টাকাপয়সা কি আদৌ কিছু আছে? … আমি মনে করি যে কলিগ মানুষ, তাকে টাকার কথা জিজ্ঞেস করি কীভাবে! আমার ইম্প্রেশনটা কি হবে তাইলে? … এইসব ভেবে ভেবে আমি ওই টাকার কথাও জিজ্ঞেস করতে পারছি না, আবার ওখান থেকে টাকা পাবো চিন্তা করে যে আগে আগেই কিছু টাকা খরচ করে ফেলেছি আর এখন ব্যাংক থেকে ট্যুরের জন্য জমানো টাকা তুলে নিয়ে চলছি সেইটা নিয়ে অনুতাপ-ও কমাতে পারছি না! …
আবার ট্যুর থেকে ফিরে এসে নিশাতের সাথে উৎসাহে উৎসাহে ২০০০ টাকা খরচ করে ফেসিয়াল-ও করেছি! সেই টাকা আবার নিশাতের কাছে দেনা! … নিশাতের সাথে অবশ্য রেগুলার খরচের বিষয় থাকে বলে দেখা যায় যে আমি ওর কাছে টাকা পেলে ও সেটা কোনো কিছুর পেমেন্টে কাভার করে দেয়, আবার ও আমার কাছে পেলে আমি দেই … ফলে এখানে ধার-দেনা বিষয়টা খুব ইনফরমাল … নায়ীমীর সাথেও তাই … সো, ওদের কাছে টাকা পাওয়া কিংবা ওরা আমার কাছে টাকা পাওয়াটা আসলে খুব একটা অবলিগেশন হিসেবে কাজ করে না …
তারপরেও, ইন অ্যানি ওয়ে, খরচ তো হচ্ছেই!
কীভাবে যে কি করবো জানি না! … সবচেয়ে বড় ক্রাইসিস তো সিএনজি ভাড়া! … ধরা যাক, আজকে আমি ব্যাংক থেকে ৬০০০ টাকা তুলেছি, আর তার মধ্যে ১০০০ টাকা মোমো আর সিজলিং চিকেন খেয়ে খরচ করে ফেলেছি! কালকে ২১ তারিখ থেকে ৩০ তারিখ পর্যন্ত এই ৯ দিনে অন্তত ৫ দিন আমি স্কুলে যাবো! আর তারমানে যাওয়া-আসাতেই খরচ হবে প্রায় ৩০০০ টাকা! আর বাকি থাকে ২০০০ টাকা! তো এই টাকা দিয়েই আমার চলতে হবে! … টিউশনির টাকা পেতে পেতেও প্রায় সেই ৩০ তারিখ … তার আগে আর কোনো টাকা পাওয়ার সোর্স নাই! …
টাকা-পয়সা বিষয়টা নিয়ে যে কেন এত ভাবতে হয়! … সেটাই ভাবতে ভালো লাগে না! …
যাই হোক, অনেক প্যাঁচাল পাড়লাম … আজকে আর তেমন কিছু নিয়ে লেখার নাই …
এখন ঘুমিয়ে যাবো … ভোরবেলা উঠে অনেকগুলা কাজ শেষ করতে হবে …
অতএব, সময় নষ্ট না করে ঘুমাতে যাই …