ঝড়ের আগের সমুদ্র দেখতে খুব ইচ্ছা হচ্ছে। কক্সবাজারে এখন ৭ নম্বর সমুদ্র সংকেত দেয়া, গত দুই/তিন দিন যাবৎ টানা বৃষ্টি হচ্ছে নাকি … সমুদ্রের পানিতে বৃষ্টি পড়ার দৃশ্য এত সুন্দর! … আর যদি সাথে ঝড় হয় তাহলে তো কথাই নাই! … উত্তাল সমুদ্র, আর তার গর্জন … ফেসবুক এ সকাল থেকেই দেখছি যে পরিচিত অনেক মানুষ এখন কক্সবাজারে … বৌদ্ধ পূর্ণিমা আর শবে বরাতের ছুটি মার্জ করে অনেকেই শুক্র থেকে সোমবারের একটা লম্বা ছুটি পেয়ে গেছে … আর এখন কক্সবাজারে অফ সিজন, বড় বড় হোটেলেও এখন খুব মিনিমাম কস্ট –এ থাকা যায় … সেকারণেই মনে হয় অনেক মানুষ গেছে … আমার ছুটি নাই … একে তো ক্লাস আছে, তার মধ্যে স্কুলের পরীক্ষা … তাও মনে হচ্ছে যে এখনই ব্যাগ গুছিয়ে রওনা দেই … মনের সাধ মিটিয়ে ঝড় দেখে আসি সাগরের পাড়ে দাঁড়িয়ে! … বিশাল বিশাল ঢেউ প্রবল শক্তি নিয়ে এসে আছড়ে পড়বে পায়ের কাছে, গায়ের ওপর … মনে হবে যেন স্বর্গীয় অনুভূতি …
দুইদিন যাবৎ প্রচণ্ড আনমনা হয়ে আছি … কেমন জানি একটা ঔদাসীন্য কাজ করছে সবকিছুতে … একেকটা কাজ করতে শুরু করছি, কিন্তু শেষ করছি না … পড়ালেখা নিয়ে বসছি, তার কিছুক্ষণ পরেই সেটা বাদ দিয়ে স্কুলের নেক্সট সেশনের ওয়ার্কশিট বানানোর কাজ ধরছি … সেটাও ভালো লাগছে না, তখন আবার অন্য কিছু করছি … কিংবা ফেসবুকেই সময় কাটাচ্ছি … কেমন জানি মাথা ভার লাগছে … খালি মনে হচ্ছে এখনই গিয়ে চুল-টুল সব কেটে ছোটো করে চলে আসি … মনে হচ্ছে চুল বড় হয়ে ঘাড়ের নিচে নেমে গেছে বলেই মাথায় টান পড়ছে! … এই গরমে চুল ঘেমে থাকে, গোসল করে ফ্যানের সামনে বসলেও শুকায় না ঠিকমতো … মনে হচ্ছে চুল বড় করার প্রজেক্টে এবার ইস্তফা দিতেই হবে …
যাই হোক, এমনিতেও দুই/তিনদিন যাবৎ আমার খুব মন-মেজাজ খারাপ। বোধ করছি এই মাসের শেষ পর্যন্ত মোটামুটি এরকম অবস্থা থাকবে … নিজেকে ডিস্ট্রাক্টেড রাখার চেষ্টা করছি অনেক ভাবনা থেকে, অনেক স্মৃতি থেকে, কিন্তু সবসময় সম্ভব হচ্ছে না। কোনো একটা অবসর মুহুর্তে ভাবনাগুলো ধাক্কা দিয়ে বের হয়ে আসছে আর চোখের সামনে স্মৃতি হয়ে ঝুলছে নির্লজ্জের মতো। আর সাথে সাথে প্রচণ্ড শক্তি দিয়ে চেপে রাখা যাবতীয় দুঃখ-কষ্ট-অনুশোচনা বোধগুলো আবার চাঙ্গা হয়ে ওঠে … আর খালি মনে হতে থাকে, একমাত্র আমারই একটা ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ এর জন্যই সবকিছু আজকে এরকম! … একমাত্র আমি নিজের ওপর শতভাগ আত্মবিশ্বাস রেখে ‘যা করতে চেয়েছিলাম’ তা করতে পারিনাই দেখেই আজকে সবকিছু এরকম … এই যে মে মাসের শেষ সপ্তাহের একটা টাইমলাইন ছিলো, এবং এইসময়ে একটা কিছু হলেও হতে পারতো … সেটা হয়নাই, কারণ আমি নিজের সিদ্ধান্তের প্রতি আত্মবিশ্বাসী থাকি নাই, আমি ‘যা হয় হবে’ অ্যাটিচুড দেখিয়ে পালিয়ে আসতে পারিনাই সিচুয়েশনগুলা থেকে! … আমি যদি আমার সিদ্ধান্তে অটল থাকতাম, তাহলে অবশ্যই সবকিছু অনেক অন্যরকম হতো, হয়তো অনেক জটিলও হতো … কিন্তু, আমি জানি, আমার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে আমি সবকিছুকে আরো জটিলতরই করেছি … অন্তত আমার নিজের কাছে আমি পরাজিত হয়েছি, এবং আমার চিন্তা-ভাবনার প্রক্রিয়ায় একটা জটিল জাল তৈরি হয়েছে, যেই জালে আমি প্রতিনিয়তই একটু একটু করে জড়াচ্ছি আর ক্রমেই আমার শ্বাস নেয়ার সম্ভাব্য সকল স্পেস আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে …
যে কোনো রকমের সিদ্ধান্ত নেয়াটাই এখন আমার জন্য অনেক জটিল প্রক্রিয়া … যে সিদ্ধান্তের ভবিষ্যত আমি জানি না, সেটা তো নয়ই! … সেটা বিয়েই হোক, আর টিউমারের আপারেশনই হোক … ধরা যাক, বাবা-মা খুঁজে পেতে কাউকে নিয়ে আসলো, টিউমার নিয়েই বিয়ে করলাম, তারপর বাচ্চা-কাচ্চা হইলো না… সেটা একটা কমপ্লিকেশন … আবার ইউটেরাস সহই টিউমার ফেলেই দিলাম, তারপর ‘বাচ্চা-কাচ্চা হবে না’ ইস্যুতে বিয়েই করতে চাইলো না কেঊ … সেটাও একটা কমপ্লিকেশন … আমি যে খুব বিয়ে করতে চাই তা না … মা ইদানীং প্রায় প্রায়ই ঘ্যান ঘ্যান করে ‘ সবারই বিয়ে হয়ে, কিন্তু আমার বাড়িতে বিয়ের বাদ্য বাজে না’ … সেই চিন্তা থেকেই বলা … আরেকদিন মা বিয়ে নিয়ে এরকম ঘ্যান ঘ্যান করতে শুরু করলে আমি বাড়ি থেকে বের হয়ে যাবো ভেবে রেখেছি … কোথায় যাবো জানি না … কোথায় গিয়ে আরাম পাবো তাও জানি না … কিন্তু বের হয়ে যাবো বলে ভেবে রেখেছি … মা নিজে একবার ভাবে না যে এখন বিয়ে করাটা কি কি টাইপের কমপ্লিকেশন তৈরি করতে পারে? … নাকি তাদের মনে হয় যে যা ইচ্ছা তাই একটা বিয়ে দিয়ে দিলো, তারপর সেটা নিয়ে কমপ্লিকেশন হইলো, তারপর স্বাধীনচেতা আমি এক-দুই কথাতেই সব ছেড়ে-ছুড়ে চলে আসলাম … তারপর ‘গট ম্যারিড, বাট ইট ডিডন্ট ওয়ার্ক আউট’ বলে আবার ‘ফিলিং ফ্রি’ অ্যাটিচুড নিয়ে ঘুরে বেড়াতে থাকলাম … মা বিয়ে সংক্রান্ত কিছু বললে আমি উত্তর না দিয়ে চুপ করে থাকি, কোনো আলাপে যাই না … না হলে হয়তো এই প্রশ্নগুলো করতাম … কিংবা … করতে পারতাম …
যাই হোক, বৃহস্পতিবারদিন জন্ডিসের জন্য ব্লাড টেস্ট করতে দিয়ে আসছিলাম … কালকে ব্লাড টেস্টের রিপোর্ট দেবে … আজকেই দেয়ার কথা … যেহেতু ওই এলাকায় আজকে কারো যাওয়া হয় নাই, তাই রিপোর্টও নেয়া হয়নি … কালকে সকালে মা ওইদিকে যাবে কি একটা কাজে … তখন নিয়ে আসবে …
আমি তো এখন স্কুল ছুটি থাকলে পারতপক্ষে বের হবো না বলে ঠিক করেছি … বের হলেই অন্তত ৫০০ টাকা খরচ! … তাও শুধু সিএনজি ভাড়া দিয়েই! … ছুটির দিন মানে ছুটির দিন … এই মেথডে চলা যায় কি না ভাবছি … বাসায় থাকবো … ঘুমাবো … বই পড়বো … পড়ালেখা করবো … স্কুলের কাজ করবো …
মাঝে মাঝে একটা টেলিভিশন কেনার কথাও ভাবি … কিছুই ভালো না লাগলে অন্তত টেলিভিশনে ‘অগি অ্যান্ড দ্য ককরোচেস’ জাতীয় কার্টুন দেখলেও সময় কেটে যাবে …
কতদিন হলো সিনেমা দেখি না! … নিজের ল্যাপটপে বসে! … এই নেটবুকে তো নর্মাল একটা ভিডিও চালালেই হ্যাং করে! … সিনেমা তো অনেক দূরের বিষয়! …
ধুর … আজকে আর লিখবো না … যতই লিখবো, ততই হতাশাজনক প্রসঙ্গ আসবে আর তারপর মেজাজ আরো খারাপ হতে থাকবে …
মাথা ব্যথা করছে … বরং সবকিছু বন্ধ করে দিয়ে গিয়ে শুয়ে থাকি আর ক্যান্ডি ক্রাশ খেলি …