দিনযাপন | ৩১১২২০২৩

এই যে বছরের শেষে এসে ভাবছি “আরেহ! চোখের পলক ফেলতে না ফেলতেই বছরটা শেষ হয়ে গেলো!”, এই ভাবনাটা ২০২২ সাল শেষ হবার সময়ও ভাবছিলাম, আবার নিশ্চয়ই ২০২৪ সাল শেষ হওয়ার সময়ও ভাববো! পৃথিবীটাও এখন ক্যামন জানি অধৈর্য হয়ে গেছে, তড়িঘড়ি করে সূর্যের চারদিকে ঘোরাঘুরি কমপ্লিট করে ফেলে! কোনোমতে ওর ডিউটিটা শেষ হলেই মনে হয় বাঁচে! …

যাই হোক, গত তিন/চার বছর যাবৎ খেয়াল করে দেখছি যে ইংরেজি বছরের হিসাবে প্রথম ছয়টা মাস ‘ওকে’ গেলেও শেষের ছয় মাসে এসে সবকিছুতে কেমন জানি একটা ছ্যাড়াব্যাড়া লেগে যায়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি !

২০২৩ সাল শুরু করেছিলাম ধুন্ধুমার ব্যস্ততা নিয়ে … প্রাচ্যনাটে ‘অচলায়তন’-এর কাজ চলছিলো, পাভেল ভাইয়ের নির্দেশনা, আমি ডিরেক্টর’স অ্যাসিস্ট্যান্ট … দিন-রাত এক করে মাথায় খালি ‘অচলায়তন’ আর ‘অচলায়তন’ … ২৫ জানুয়ারি ‘অচলায়তন’ -এর প্রিমিয়ার শো হলো, থিয়েটার গ্রুপের কাজে একটু দম ফেলার ফুসরৎ মিললো, কিন্তু স্কুলের কাজের তখন পিক টাইম শুরু হলো … ৯ মার্চ স্কুলের ধানমন্ডি সেকশনের অ্যানুয়াল শো, সেখানে আবার সিনিয়ার সেকশনের স্টুডেন্টদের একটা নাটকেরও শো হবে … আমি প্রায় পুরো ফেব্রুয়ারি মাসটা সকালবেলা ধানমন্ডি, দুপুরে মোহাম্মদপুর দৌড়ে দৌড়ে নাটকের রিহার্সাল করালাম … এই অ্যানুয়াল শো-টা আমার জন্য একটা পরীক্ষা ছিলো এই সেন্সে যে ২০২২-এর সেপ্টেম্বরে ড্রামা টিচার হিসেবে সামারফিল্ড স্কুলে জয়েন করার পর এই প্রোগ্রামটাই আমার কাজের দক্ষতা দেখানোর প্রথম সুযোগ ছিলো … তো, নাটকের শো ভালো হলো, বিশেষ করে সিনিয়র সেকশন বাজিমাৎ করলো, আমি পরীক্ষায় পাশ করলাম … ধানমন্ডির অ্যানুয়াল শো শেষ হওয়ার পর শুরু হলো মোহাম্মদপুরের অ্যানুয়াল শো-এর কাজ, সেই সাথে প্রাচ্যনাটে অনেকরকমের কার্যক্রমের সাথে সাথে প্রতি মাসেই হয় ‘আগুনযাত্রা’, নয়তো ‘অচলায়তন’ -এর শো চলতেই থাকলো, আমারও স্কুলের কাজ শেষ করে সরাসরি বাসায় আসার ফুসরৎ মিললো কালে ভদ্রে … স্কুল শেষ করে কোথাও বসে লাঞ্চ করি, টাইম পাস করি, তারপর গ্রুপে যাই, বাসায় ফিরে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে যাই, পরের দিন আবার স্কুল, লাঞ্চ, টাইম পাস, গ্রুপ, বাসা, ঘুম … এভাবে একটা চক্রের মধ্যে ঢুকে গিয়েছিলাম যেন … কাজ, কাজ, কাজ, কাজ … চলছে তো চলছেই … তবু, সবকিছুর মধ্যেই বেশ একটা পজিটিভ ভাইব ছিলো যেন …

জুন মাসের শেষের দিকে এসে অনেককিছু উল্টাপাল্টা হয়ে গেলো… লালাম, মানে আমার বড় খালা মারা গেলো … ২১ জুন, ২০২৩, বুধবার, ভোরবেলা, সম্ভবত সাড়ে চারটা কি পৌনে পাঁচটা সময় … ১৮ তারিখ রাত থেকে লালাম হাসপাতালে ভর্তি ছিলো… শরীরে সোডিয়াম বেড়ে যাওয়ার কারণে ইউরিন পাস হচ্ছিলো না, শরীর ফুলে গিয়েছিলো, প্রেশার কমছিলো না এরকম কিছু কমপ্লিকেসি নিয়ে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো … অবশেষে ! … অবশেষে বললাম এইজন্য যে লালামকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা-বার্তা চলছিলো তার আগের সপ্তাহখানেক ধরেই, আর ডাক্তারের সাথে কনসাল্ট করার কথা হচ্ছিলো আরও প্রায় মাসখানেক ধরে … কিন্তু লালাম গোঁ ধরেই ছিলো সে যাবে না … সেই যে ১৭ এপ্রিল তাকে বাংলাদেশ আই হসপিটালে নিয়ে গেলাম, সেখানে সিনিয়র ডাক্তার তার চোখ টেস্ট করে, রিপোর্ট দেখে-টেখে আঁতকে উঠে হড়বড় করে বললো ‘সার্জারি লাগবে’ ‘সার্জারি লাগবে’ ‘না হলে চোখ আর ঠিক হবে না…’ ‘সার্জারি লাগবে’ ‘সার্জারি লাগবে’ , আর সার্জারির কথা শুনে সেই যে লালামের মনে এক আতঙ্ক তৈরি হলো যে সার্জারি মানে চোখ কেটে ফেলে দেবে, সেই আতঙ্কের পরিণামস্বরূপ তার প্রেশার এমন হাই হয়ে গেলো যে সে মারা যাওয়ার আগ অবধি সেই প্রেশার কমে নাই …

লালাম মারা গিয়ে আমাদের বাসার সবার জীবনযাপনের রুটিন উল্টাপাল্টা করে দিয়ে গেলো … টিয়াম আর খালু দুইজনই সকালবেলা অফিসে চলে যায়, ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা পার … এতদিন তো লালাম ছিলো, এখন তাদের মেয়ে প্রমা থাকবে কোথায়? ওকে স্কুলে নিয়ে যাবে কে, আনবে কে? … এরপর রুটিন দাঁড়ালো এই যে সকালে অফিসে যাওয়ার আগে টিয়াম বা ছোটোখালু প্রমাকে স্কুলে দিয়ে যায়, প্রমার স্কুল শেষ হলে টিয়ামের বাসার হেল্পিং হ্যান্ড নাজমা প্রমাকে স্কুল থেকে পিক করে আমাদের বাসায় নিয়ে আসে, প্রমা দুপুর-বিকাল আমার ঘরেই থাকে, সন্ধ্যায় অফিস শেষে বাসায় ফেরার পথে টিয়াম বা খালু আবার ওকে নিয়ে যায় … আমাদের বাসায়ও এখন প্রতিদিনের যাপিত জীবনের অন্যতম অংশ প্রমা … আমাদের নিত্যকার ব্যস্ততাও এখন ডিসাইডেড হয় প্রমার কথা মাথায় রেখে … লালাম থাকতে আমরা কত আলোচনা করতাম যে প্রমাকে আমাদের বাসায় এনে কয়েকটা দিন রাখি, ও একটু নিজের মতো করে আমাদের বাসায় বেড়িয়ে যাক, কিন্তু সেই আলোচনা কখনো পরিকল্পনা হিসেবে বাস্তবায়িত হতো না … হয় লালাম বাঁধ সাধতো, নয়তো টিয়াম … আর এখন, আলোচনা বা পরিকল্পনার কোনো অবকাশ না রেখেই বাড়ির আরেক সদস্যের মতো প্রতিদিনের একটা বড় সময় প্রমা আমাদের বাসাতেই থাকে …

লালামের মারা যাওয়ার বিষয়টায় এখনও আমরা কেউ অভ্যস্ত হতে পারি নাই … তার অনুপস্থিতির কারণে সৃষ্ট যাবতীয় ওলট-পালটগুলাও এখনও সেটল করা যায় নাই … এটা করা যাবেও না … সময়ের সাথে সাথে এভাবেই, এরকম উল্টাপাল্টা রুটিনেই আমরা অভ্যস্ত হয়ে যাবো … তাও কোনোকিছু আর আগের মতো হবে না …

যাই হোক, লালামের অনুপস্থিতিকে মেনে নিয়ে জীবনযাপনের নতুন রুটিনে অভ্যস্ত হতে হতে স্কুলের কাজ, থিয়েটার গ্রুপের কাজ সবকিছুই পূর্ণোদ্যমে চলতে থাকলো … এরমধ্যে স্কুলে শুরু হলো এক মহাযজ্ঞের প্রস্তুতি, স্কুলের প্রথম পূর্ণাঙ্গ মঞ্চ নাটকের কাজ … এর আগে অ্যানুয়াল শো-এর নাটকগুলা আমি একা একা, কখনো শহিদুল মামুন ভাইয়ের হেল্প নিয়ে, অমিত-কে দিয়ে নিজের খরচে প্রপস করিয়ে, নিজে দৌড়ে দৌড়ে কস্টিউম টস্টিউম করে, ইউটিউব থেকে মিউজিক বাজিয়ে যতটুকু যা পারি করেছি, কিন্তু একটা পূর্ণাঙ্গ মঞ্চ নাটক তো একা নামানো যায় না! মোটামুটি প্রাচ্যনাটেরই যারা রেগুলার বিভিন্ন স্কুলে নাটকের কাজ করে, বাচ্চাদের সাথে কাজ করে তাদের নিয়েই একটা ডিরেক্টরিয়াল ও টেকনিক্যাল টিম তৈরি হলো, স্কুলের নতুন সেশন শুরু হবার পর আগস্টের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হলো নাটকের কাজ … ‘গুপি গাইন বাঘা বাইন’ …

এদিকে, ওই যে বছরের শুরু থেকেই বিরামহীন কাজ করছিলাম, আর লালামের হঠাৎ চলে যাওয়ার ধাক্কায় যে মানসিকভাবে কোনো বিশ্রাম হয়নি, সবকিছু মিলিয়ে শরীরটা তার ক্ষতিসাধনের জানান দিলো আগস্টের শেষের দিকে এসে … একদিন স্কুলে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লাম, ডাক্তার দেখিয়ে জানা গেলো হিমোগ্লোবিন আর আয়রন-এর লেভেল এমন পর্যায়ে নেমেছে যে শরীর আর চলবার শক্তি পাচ্ছে না! … আয়রন ডেফিসিয়েন্সি তো আমার ৪/৫ বছর ধরেই, ৩.৫ বা ৪ এর লেভেলে আটকে আছে যেখানে নর্মালি ১০/১২ হবার কথা! হিমোগ্লোবিনও ৭/৮ এর উপরে থাকে না সেটাও ৩/৪ বছর হবে! কিন্তু তাই বলে এবারের মতো এরকম কলাপ্স করিনি কখনো! … ডাক্তার বলে দিলো অন্তত দুই মাস কমপ্লিট হাউজ রেস্ট আর নিয়মিত খাওয়া-দাওয়া করতে পারলে হিমোগ্লোবিন আর আয়রনের লেভেলের নিশ্চিত উন্নতি ঘটানো যাবে! … নিয়মিত খাওয়া-দাওয়া না হয় করলাম, কিন্তু দুই মাস রেস্ট কোথায় পাবো? কে দেবে আমাকে এই রেস্ট? স্কুলে পর পর দুইদিন না গেলেই তো বিশাল ডিজাস্টার হয়ে যায়! … তারমধ্যে তখন আবার নাটকের রিহার্সাল চলছে! … আমি তখন পারলে গাট্টি-বোচকা বেঁধে সবকিছু নিয়ে স্কুলেই দিনরাত থাকি! … কোনোমতে তিন কোর্স আয়রন স্যালাইন নিলাম, একগাদা ওষুধপত্র খাওয়া শুরু করলাম … কিন্তু কাজের গতি থামানো গেলো না …

মাঝখান দিয়ে আমাকে অনেকটুকু স্যাক্রিফাইস করতে হলো প্রাচ্যনাটের ব্যস্ততা! … শরীরের এমন অবস্থা হয়ে গেলো যে সকালবেলা কোনোমতে স্কুলে গিয়ে দুপুর পর্যন্ত কাজ-টাজ করে বাসায় ফিরে কেবল জামাকাপড় পাল্টানোর জন্য যেটুকু সময় লাগে সেটুকু সময় পার করেই সোজা বিছানায় শুয়ে পড়তাম আর মরার মতো ৩/৪ ঘণ্টা ঘুমিয়ে এরপর উঠে একটু খাওয়া দাওয়া করে, ওষুধ খেয়ে, এরপর আবার ঘুমিয়ে যেতাম! … এরমধ্যে যে প্রাচ্যনাটে বিভিন্ন রকমের শো আর কাজ-বাজ হয়েছে, সবকিছু থেকেই দূরে থাকা হলো, আর অচলায়তন বা আগুনযাত্রার শো যখন হয়েছে, যেই আমি অন্যসময় প্রতিদিনের রিহার্সালের প্রতিটা ঘণ্টায় উপস্থিত থাকি, সেই আমি এমনও হয়েছে যে কেবল একদিন রিহার্সালে থেকে, কিংবা রিহার্সালে না গিয়েই শো-তে অ্যাটেন্ড করেছি! …

এরমধ্যে স্কুলে ‘গুপি গাইন বাঘা বাইন’-এর শো হলো ১৪ অক্টোবর। স্কুলের প্রথম পূর্ণাঙ্গ মঞ্চনাটকের শো, আর সেটার সফল আয়োজন আর মঞ্চায়নের ফলে আমি সবার কাছে একশ’তে একশ’ পেয়ে গেলাম! সবার ‘বাহবা’ পেয়ে, পিঠ চাপড়ানি পেয়ে, সবার মুখে ভূয়সী প্রশংসা শুনে শুনে কয়েকদিন কেটে গেলো! তবে, এত “ভালো” “ভালো” শোনাটা যে ভালো না, অন্তত প্রফেশনাল ফিল্ডে, সেইটাও কিছুদিনের ব্যবধানেই প্রমাণ পেয়েছি! সেরকম কিছুর জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলাম বলে অবাক হইনি! …

নভেম্বরে বিএনপি’র অবরোধ কর্মসূচি আমার জন্য অনেকটাই আশীর্বাদ হয়ে এলো … ওই সময় যেদিন অবরোধ থাকতো সেদিন অনলাইনে স্কুলের কার্যক্রম চলতো, আর বাকি দিনগুলো সরাসরি স্কুলে যেতে হতো … তো, সেটাও ছিলো মাত্র তিনদিন … আর অনলাইনে তো ড্রামা ক্লাস হয়নি, তাই আমারও অবরোধের দিনগুলাতে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ বলতে নিজের মতোই স্ক্রিপ্ট লেখা, রিহার্সাল প্ল্যান করা, জুম মিটিং-এ অ্যাটেন্ড করা এইসব এঙ্গেজমেন্ট থাকতো … ফলে, পুরো একটা মাস সপ্তাহে চারদিন বাসায় থেকে থেকে আমার অন্তত বিশ্রাম হলো, অ্যালার্ম দেয়ার বাধ্যবাধকতা বিহীন নিরবচ্ছিন্ন ঘুম হলো, প্রচুর খাওয়া-দাওয়া হলো …

নভেম্বর মাসে অবরোধের সময়টায় ম্যাক্সিমাম দিন গৃহবাসী থাকার আরেকটা ভালো দিক ছিলো ওইসময়ে আমার মথ ফোবিয়ার সিজনে বাইরে থাকার প্যারাটাও কম হলো। বিগত ৩/৪ বছরের চাইতে এবার একটু বেশি মথ উড়তে দেখেছি যেই কয়েকদিন বের হয়েছি, তাই বাসায় থাকার দিনগুলো লিটেরালি “বেঁচে গেছি” টাইপ অনুভূতির দিন ছিলো …

ডিসেম্বর মাস থেকে আবার একটু একটু করে অবরোধের দিনও বের হয়ে স্কুলে যাওয়া শুরু হলো কারণ তখন স্কুলের সুবর্ণ জয়ন্তী প্রোগ্রামের রিহার্সাল শুরু হয়ে গেলো … আর ইতিমধ্যে থিয়েটার গ্রুপেরও বিভিন্ন কাজে একটু একটু করে আবার ইনভলভ হওয়া শুরু করলাম … গাযা-ইজরায়েল যুদ্ধের প্রতিবাদে প্রাচ্যনাট থেকে ‘গাযা মনোলগ, বিষণ্ণ কমলার দেশ’ নামে একটা ট্রিবিউট শো হলো, ঘটনাচক্রে সেই শো-এর স্ক্রিপ্টের একটা অংশ অনুবাদ করলাম আমি…’গাযা মনোলগস’ শিরোনামে ফিলিস্তিনের আশ্‌তার থিয়েটারের একটা প্রযোজনা আছে, যেখানে ফিলিস্তিনেরই কিছু তরুণ-তরুণী ২০০৮-০৯ সালে তাদের কৈশোরে তারা গাযা-ইজরায়েলের যুদ্ধের যে ভয়াবহতা দেখেছিলো তা মনোলগ আকারে বর্ণনা করেছে … সেই মনোলগগুলোই অনুবাদ করা হলো আমার …

তবে, এই অনুবাদের কাজের আগে থেকেই অবরোধের মধ্যে একদিন হুট করে একটা বই নিয়ে বসে অনুবাদের কাজ শুরু করেছিলাম, সপ্তাহখানেক একটানা কাজ করে সেই বইয়ের প্রিফেস আর একটা চ্যাপ্টারের অনুবাদের রাফ কাজও করে ফেলেছিলাম … কিন্তু এরপর বিভিন্ন ব্যস্ততা যোগ হয়ে যাওয়ায় কাজটায় একটা ভাটা পড়লো … ২০২৪ সালে বিভিন্ন অবসরে এই বইয়ের অনুবাদের কাজটা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার একটা ইরাদা রাখলাম … দেখি, কতদূর যেতে পারি! …

একমাস অবরোধের মধ্যে একটানা বাসায় থেকে, নিজেকে বেশি বেশি সময় দিয়ে এখন আবার ২০২০ সালের মতো বাসায় থাকার মজাটা ফিরে পেয়েছি! ইদানীং বাসা থেকে বের হয়ে কোথাও যেতে হবে মনে হলেই কেমন জানি একটা আলসেমি ভর করে! মনে হয় যে বাসায় থাকলে কতরকম ভাবে নিজেকে সময় দিতে পারবো! বের হলে, কাজে গেলে, সেই তো মানুষকে খুশি রেখে চলার কায়দা করে চলা … বাসায় নিজের মতো থাকতে পারা কী শান্তির! কারো সাথে নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া ইন্টারঅ্যাকশন করার ঝামেলা নাই, মনের ভেতর হাজার বিরক্তি থাকলেও হাসি হাসি মুখে সবার সাথে হাই-হ্যালো-আচ্ছা-ঠিকাছে করার ঝামেলা নাই, কেউ নিজের পাওয়ার খাটানোর জন্য আজাইরা কাজকর্ম করে বা কথাবার্তা বলে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করার ঝামেলা নাই … বাসায় নিজের একটা কর্ণারে বসে বই পড়া, লেখালেখি করা, সিনেমা দেখা আর চুপচাপ সোশ্যাল মিডিয়ায় মানুষের কাজকর্ম দেখে যাওয়ার যে মজা, বাইরে গিয়ে মানুষের সাথে কপট আচরণ করে সারভাইভালের মধ্যে সেই মজার ছিটেফোঁটাও নাই! …

আর দুই/তিন বছরের মধ্যে যখন আমার বয়স চল্লিশ হয়ে যাবে, তখন চাকরি-বাকরি, কাজ-বাজ সব ছেড়ে-টেড়ে একেবারে গৃহবাসী হয়ে যাবো কী না, সেই সংক্রান্ত একটা চিন্তা এই অবরোধের মধ্যেই মাথায় ঢুকেছে! চিন্তাটার বীজ অঙ্কুর থেকে চারা হয়ে কত বড় গাছে পরিণত হয় দেখতে থাকি! …

২০২৪ সাল নিয়ে পারটিকুলার তেমন রেজুলেশন নেই … চলতে থাকুক! … কোথাকার পানি কোথায় গিয়ে মেশে সেইটাই দেখে যাওয়ার কাজ চলবে … মাথায় কিছু চিন্তার বুদবুদ ফুটছে, সেগুলো কতটুকু কার্যসিদ্ধি হয় তা বছরের শেষেই না হয় যাচাই-বাছাই করবো…

আপাতত ২০২৩ সালের চ্যাপ্টার এখানেই ক্লোজ করি! …

Leave a comment