দিনযাপন | ১২০৩২০১৫

ক্যামন জানি আধা-খ্যাচড়া টাইপের একটা দিন গেলো!  না কোনো কাজ ঠিকমতো হলো, না অকাজ! … কেমন জানি একটা দিন! …

বেশ কদিন যাবৎ-ই বিভিন্ন মানুষের প্রোফাইলে টাইম হপ অ্যাপ্লিকেশনটার কাজ-কারবার দেখে উৎসাহিত হচ্ছিলাম। আজকে আমিও বিকেল বেলা শুয়ে শুয়ে আজাইরা সময় পার করতে গিয়ে অ্যাপটা নামিয়ে ফেললাম। মজাই লাগলো বিষয়টা। এই দিনে সেই ৭ বছর আগেও কি করেছিলাম, সেটাও মনে করিয়ে দেয়! … যেমন, আজকে এই অ্যাপ-এর কল্যাণে আমি জানতে পারলাম যে ৬ বছর আগের এই দিনে আমি প্রথমবার আমাদের ‘রাজা এবং অন্যান্য’ নাটকটা দেখতে গিয়েছিলাম। তারপর জানলাম যে পাঁচ বছর আগের এই দিনে আমি কোনো একজনকে উদ্দেশ্য করে লিখেছিলাম যে ‘ আমি মেঘের দেশে যেতে চাই … নীল রঙা মেঘের কাছে’ … তারপর আরও জানলাম যে গত বছর এই দিনে আমি মনে মনে ‘তাকে’ উদ্দেশ্য করে ব্যাকস্ট্রিট বয়েজ-এর একটা গানের ভিডিও শেয়ার করেছিলাম, ‘ আই ডোন্ট কেয়ার হু ইউ আর, হোয়াট ইউ ডিড, অ্যাজ লঙ অ্যাজ ইউ লাভ মি!’ … ওই স্ট্যাটাসের কোথাও অবশ্য লেখা ছিলো না যে আমি এটা তার উদ্দেশ্যে শেয়ার করেছি। কিন্তু মনে মনে ভাবটা তাই ছিলো আমার! … হয়তো সে বুঝেছিলো, হয়তো বুঝে নাই! …

আশা করা যাচ্ছে, আগামী দিনগুলোতেও টাইম হপ আমার জন্য অনেক চমকপ্রদ চমক নিয়ে আসবে! … জয়তু টাইম হপ!

আজকে সন্ধ্যায় হুট করেই সিনেমা দেখতে যাওয়ার একটা অফার আসলো। কিন্তু গেলাম না। একে তো টাকা- পয়সা নাই, তাছাড়া যেতে ইচ্ছাও করছিলো না। রিহার্সালের ছুতা দেখিয়ে না করে দিলাম। বেশ অনেকদিন যাবৎ ইচ্ছা করেই তাদের সাথে কোননো যোগাযোগ করছি না … অবশ্য এরা আমার এমনই বন্ধুদল যে আমি দিনের পর দিন কোনো যোগাযোগ না করলেও কেউ কোনো দরকার না হওয়া পর্যন্ত কখনো খোঁজ নেয় না যে ‘ কি হইলো? আওয়াজ নাই কেন?’ … কাজের বাইরে কারো খোঁজ নেয়ার বিষয়টা আসলে মনে হয় অনেক অস্বাভাবিক একটা মানবিক আচরণ! আমিই হয়তো এখনো পর্যন্ত সেটা বুঝে উঠতে পারি নাই! … যেমন, একটা জায়গায় আমি হয়তো পরপর চারদিন গেলাম, কিন্তু পঞ্চম দিন গেলাম না। তাতে কেউ আসলে খোঁজ নেয় না যে ‘ আজকে কি হলো?’ কিংবা ষষ্ঠ দিন কেউ জানতে চায় না ‘ আজকে আসবা না?’ … তারপর একটা সময় দেখা যায় হয় আমিই নিজের গরজ দেখায় আবার সপ্তম দিন যোগাযোগ করি, নয়তো আর যোগাযোগই করি না … তাতেও অবশ্য কারো কিছু যায় আসে না। আস্তে আস্তে সবাই সবকিছু ভুলেই যায়! … কারো জন্য কি কারো জীবন এখন থেমে থাকে? সবাই এখন সবার নিজের জীবন নিয়েই ব্যস্ত। … এখানে কার কি হলো, কে থাকলো, কে থাকলো না তাতে কারো কিছু যায় আসে না! …

আমারই সবসময় সবাইকে নিয়ে একটু বেশি যায়-আসে, এটাই সমস্যা … এই অভ্যাসটা মনে হয় ত্যাগ করার সময় হচ্ছে আস্তে আস্তে …

যাই হোক, এরকম সিনেমা দেখার প্ল্যান-ট্যান হলে তাও আওয়াজ পাই তাদের কাছ থেকে। এটাই বা কম কি? … বন্ধুত্ব এখন অনেক বেশি ম্যাটেরিয়ালিস্টিক, সিনেমা দেখা, খাওয়া-দাওয়া, গেট-টুগেদার এগুলার সময়ই আঙ্গুলের গণণায় বন্ধুত্বের অবস্থান হয়। আর নিয়মিত যোগাযোগ, আড্ডাবাজি, খোঁজ – খবর এগুলা অতিরিক্ত আবেগ … এটাই বাস্তব …

তবে, বিভিন্ন কারণে এখন তাদের কাছ থেকে নিজেকে দূরে সরায় নিচ্ছি … একদমই ইন্টেনশনালি … ফলে, যোগাযোগের উছিলা যত কম হয় ততই ভালো … ইন ফ্যাক্ট, এখন আসলে ওদের সাথে মিশতে আমার অনেক অস্বস্তি লাগে। সমস্যাটা তাদের না, কিন্তু সামহাও অনেক কিছুই অজ্ঞাতসারে তাদের সাথে আমার ইন্টারঅ্যাকশনকে প্রভাবিত করে, করছে এবং ভবিষ্যতেও করবে। ওই একটা মানুষ – এই একটা সার্কেলের সাথে সে এতটা ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত! এই ঘনিষ্ঠতা একসময় ‘তার’ কাছে যাবার জন্য আমার একটা বড় উৎসাহের জায়গা ছিলো, আর এখন তেমনই গলার কাঁটা! এমন নয় যে সবাই সবকিছু জানে, এমনকি তার সাথে আমার কি ছিলো না ছিলো সেগুলো জানে, কিন্তু, তারপরও,  একজন-দু’জন তো জানেই কিছু কিছু বিষয়, আর এখন অন্তত এটা জানে বা আঁচ করে যে তার সাথে আমার আর যোগাযোগ নেই। মাঝখানের অনেক অনেক গল্পই তো একজন বাদে সবারই অজানা। ওই একজনের জন্যই আসলে আমার নিজেকে সরিয়ে নেয়া। কি লাভ আমার নিজের অস্বস্তিবোধকে সবার সামনে প্রকাশ করে দেয়া? … মাঝে মাঝেই আমি নিজেকে সামলাতে পারি না। আর কখনো যদি ঘটনাচক্রে সবার মাঝে ‘তার’ সাথে দেখা হয়ে যায়, তাহলে আমার অস্বস্তিও বাড়বে, আমার ওই বন্ধুটাও অস্বস্তিতে পড়বে। … অবশ্য কিছু কারণে সেই বন্ধুর ওপর আমার যথেষ্ট খারাপ লাগার অনুভূতিও আছে। সেটা হয়তো আমার অযৌক্তিক আবেগ, হয়তো আমি তার কাছ থেকে যে প্রতিক্রিয়া, যেটুকু সাহায্যের ভূমিকা আশা করেছিলাম, সেটা অনেক বেশি ‘ফ্যান্টাসি’ ছিলো! … আমি হয়তো অনেক বেশি ফ্যান্টাসির জগতে থাকি, তাই বলে সবাই থাকবে তা তো না! … জীবনটা তো আর গল্প – সিনেমা না যে এরকম পরিস্থিতিতে বন্ধুর জন্য বন্ধু ‘যুক্তি’ দিয়ে বিচার না করে ‘আবেগ’ নিয়ে সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসবে আর দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা করে দিয়ে মহান অবতারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে!  ‘যুক্তি’র বিচারে যা ঠিক, তাই হয়তো সে করেছে/করছে। ইনফ্যাক্ট, মানুষ মাত্রই তো কঠিন সমস্যার পরিস্থিতিতে ‘যুক্তিবাদী’ … যেচে পড়ে নিজের পায়ে কে কুড়াল মারতে চায়? আমার মতো ভোঁদাই আর কয়জন যারা কাছের মানুষ কিংবা পছন্দের মানুষের জন্য যুক্তিটাকে পাশে রেখে আবেগটাকে আগে মূল্য দেয়? …

দুপুরবেলাতেই শুয়ে শুয়ে ভাবছিলাম, ‘তার’ সাথে এসোসিয়েটেড বেশিরভাগ জিনিসই আমার কাছ থেকে খুব অদ্ভুতভাবে হারিয়ে গেছে, কিংবা হাতছাড়া হয়ে গেছে! সে আমাকে একটা পেনড্রাইভ কিনে দিয়েছিলো। মানে, সে টাকা খরচ করে কিনে দেয়নি, আমি টাকা দিয়েছিলাম, সে আমার জন্য কিনে এনেছিলো। তো, সেই  পেনড্রাইভ খুব কম সময়ের জন্যই আমি ব্যবহার করতে পেরেছি। ঘটনাচক্রে সেটা মানুষের হাতে হাতেই ঘুরেছে, আর শেষ পর্যন্ত হারিয়েই গেছে। তার সাথে একবার চশমার দোকানে গিয়ে একটা সানগ্লাস কিনেছিলাম খুব পছন্দ করে, সেটাও চুরি হয়ে গেছে। একটা চশমার ফ্রেম কিনেছিলাম, সেটাও একসময় ভেঙ্গে গেছে। যে মোবাইলটায় তাকে পাঠানো আর তার কাছ থেকে পাওয়া এত এত মেসেজ ছিলো, সেই মোবাইল ফোন ছিনতাই হয়ে গেছে … একটা জ্যাকেট ঘটনাচক্রে তার কাছ থেকে একরকমভাবে পাওয়া হয়েছিলো, সেটাও পুরো শীত জুড়ে পরেছে আরেকজন … যেই দুইটা মেডিক্যাল রিপোর্ট তার সাথে সম্পৃক্ত, সেগুলোও তার কাছ থেকেই হারিয়ে গেছে … তার সাথে আমার ছোট-বড় স্মৃতির উপাদান অনেক! … কিন্তু, তারপরও, যেই উপাদানগুলোকে সবচেয়ে বেশি আগলে রাখতে চেয়েছি, সেগুলোই কেমন করে জানি হারিয়ে গেছে কিংবা হাতছাড়া হয়ে থেকেছে …

এগুলো নিয়ে ভাবতে গেলেই কেমন যেন তালগোল পাকিয়ে যায় সবকিছু! যেই আমি কখনোই কোনো পিছুটান নিয়ে চলি নাই, কেউ থাকলো কি গেলো সেটা নিয়ে খুব বেশি আপ্লুত হই নাই, সেই আমার জীবনের সবকিছুর সাথে মাত্র এক বছরের মধ্যে একটা মানুষ কেমনভাবে জড়িয়ে গেলো! তার সাথে যে সুতাটার টান, সেটা আবার চাইলেই কেটে ফেলা যাচ্ছে না, কারণ অন্য অনেকগুলা সুতা এই সুতার সাথে এমনভাবে গিট্টূ লেগেছে যে সেই সুতা কাটতে গেলে পুরা গিট্টূশুদ্ধ কাটতে হবে। … নিজে নিজে গিট খোলার উপায় আমার নেই, কারণ সুতার প্যাঁচে আমার এমন হাঁসফাঁস অবস্থা যে সেখান থেকে গিট্টু পর্যন্ত যাবার চেষ্টা করলে আরও বেশি করে গিট বাঁধবে। … আর এই দুনিয়াতে কারো তো আর খেয়ে পড়ে অফুরন্ত সময় নাই যে আমার জন্য বসে বসে একটার পর  একটা সুতার প্যাঁচ খুলবে আর গিট্টুমুক্ত করবে! … সুতরাং, গিট্টু লাগা সুতার প্যাঁচ নিয়েই আমি জীবনযাপন করতে থাকি। যখন আর সহ্য হবে না, তখন একবারে সব সূতা কেটে ফেলবো! … ততদিন পর্যন্ত যেভাবে চলে না হয় চলতেই থাকুক! …

One response to “দিনযাপন | ১২০৩২০১৫

  1. আমি কিছুদিন এমন স্মৃতিকাতর অবস্থায় ছিলাম। খুব যন্ত্রণার ছিল বিষয়টা, অনেক জরুরী বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি তখন। আশা করি তোমার এমন হবেনা। 🙂

Leave a comment