দিনযাপন। ২৮০১২০১৬

গত কয়েকদিনের দিনযাপন না লেখার কোনোরকম কারণ সংক্রান্ত ফিরিস্তি না দেই! এই ঠান্ডার মধ্যে স্কুল করে, টিউশনি করে তারপর গ্রুপ হয়ে বাসায় ফিরতে ফিরতে আর কিছু করার কোনো উৎসাহ থাকে না। এর মধ্যে গত কয়েকদিন ধরেই তো বাসায় ফিরছি ১২টার পরে! কারণ – বানিজ্য মেলার জন্য রাত সাড়ে ১১টা অব্ধিও চিন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের সামনের রাস্তা পর্যন্ত প্রচন্ড জ্যাম। একেকদিন আধা ঘণ্টা, পৌণে এক ঘণ্টা পর্যন্তও বসে থেকেছি! গ্রুপে না গিয়ে বাসায় চলে আসারও তো উপায় নাই। খোয়াবনামার কাজের অংশ হিসেবেই একটা প্রেজেন্টেশন করার চিন্তা করা হয়েছে। সেটা ইনহাউজের মতো করে প্রেজেন্ট করা হবে ২১ ফেব্রুয়ারি। সেটার জন্য এখন বেশ সিরিয়াসলিই স্ক্রিপ্ট পড়া হচ্ছে, একটা টিম করে কম্পোজিশনের কাজও শুরু হয়ে যাবে এই সপ্তাহেই। ফলে গ্রুপে তো এখন রেগুলার যেতেই হবে। আমি যদিও বুধবার আর বৃহস্পতিবারের কথা মৌখিকভাবে বলে রেখেছি যে ওই দুইদিন আমি খুব প্রয়োজন না হলে যাবো না। বাণিজ্য মেলার কাহিনি চলার মধ্যে যতটা সম্ভব তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আসতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু সেটা আদতে সম্ভব হচ্ছে না।

অবশ্য আগামীকাল শুক্রবার, এবং বাণিজ্য মেলা শেষ হবার আগের শেষ শুক্রবার। সুতরাং ধরেই নেয়া যাচ্ছে যে কালকে ঢাকা শহরের অর্ধেক মানুষই বাণিজ্যমেলায় ভিড় জমাবে। কালকে আমি মিরপুর এলাকার বাইরে বেরই হবো না। কালকে যদিও ২৯তম ব্যাচের ফেয়ারওয়েল আছে, গেলে ভালো হতো। কিন্তু সেজন্য একবার জ্যাম ঠেলে যাবো, আবার একই পরিমাণ কষ্ট করে ফিরবো, তাও রাত সাড়ে বারোটা বেজে যাবে … অত তেল অনুভব করছি না! ইদানীং এসব তেল আমার অনেকটাই কমে গেছে।

যাই হোক, এই কয়দিনে যে কি কি বিষয় লেখার মধ্যে থাকতে পারতো, কিংবা দিনযাপনে লেখার মতোও কি কি ঘটনা ঘটেছে সেগুলা সবই এখন মাথার মধ্যে জট পাকিয়ে গেছে। শরীফ ভাইয়ের বৌভাত গেলো … সেটা নিয়ে লেখার মতো যেটুকু ঘটনা আছে, তা ঐদিন লিখলে যতটা প্রাসঙ্গিক হতো, এখন আর তেমনটা হবে না … এখন খালি এক লাইনে বলা যেতে পারে যে, আমিনবাজার গেলাম, সেখান থেকে ফেরার সময় রানা আর শর্মীকে নিয়ে আগে বাসায় আসলাম, তারপর কিছুক্ষণ আড্ডা মেরে ওদের সাথেই গ্রুপে গেলাম … ব্যাস! এখন আমিনবাজার যেতে গিয়ে একবার সিএনজি, একবার রিকশা, কতটা পথ হাঁটা এসব করতে গিয়ে যে মনে মনে ভাবছিলাম যে ‘ ভাগ্যিস হলুদের দিন সন্ধ্যায় আমি আর নায়ীমী একা একা বৃষ্টির মধ্যে আসার চেষ্টা করি নাই! শিওর আমাদেরকে ছিনতাইকারী ধরতো, কিংবা কোনো না কোনো ক্যাচালে পড়ে যেতাম!’ সেইটা নিয়ে তো এইখানে আর বিস্তারিত বলার স্কোপ নাই!

এর পরে অবশ্য ইভেন্ট হিসেবে খুব স্পেশাল আর কিছু নাই-ও! স্কুল, গ্রুপ, অনুবাদের কাজ, বিবিসি’র কাজ এইসবই গত এক সপ্তাহে ঘুরে-ফিরে ঘটেছে। অনুবাদের ব্যাপারে বলতে পারি যে অনুবাদের কাজটা এখন সবচেয়ে উৎসাহের জায়গা দখল করে নিয়েছে। কিসের গ্রুপ, কিসের দিনযাপন, কিসের অন্য সব ব্যস্ততা! যখনি সময় পাচ্ছি, এই অনুবাদের কাজটাই করছি! মাঝখানে প্রথম চ্যাপ্টারটা দুই-একজনকে, যেমন সাদি আর গোপীকে পাঠিয়েছিলাম যে ওরা পড়ে আমাকে ওদের ফিডব্যাক দিক। ফিডব্যাক চাইলাম, যাতে বুঝতে পারি যে লেখার ধরণটা ঠিক আছে কি না, কারো পড়ে আবার মনে হয় কি না যে ‘মাথার ওপর দিয়ে গেলো’, কিংবা যাতে একেবারেই খটমট অনুবাদ মনে না হয়। সাদি’র ফিডব্যাক পেয়েছি, গোপীরটা এখনো পাই নাই। এই সপ্তাহে আরো দুইজনকে পাঠাবো বলে ভাবছি।তবে যেই গতি চলে এসেছে এখন, যদি বুধ-বৃহস্পতি-শুক্র-শনি এই চারদিন বাসায় বেশিরভাগ সময়টা দিয়ে কাজটা এগিয়ে নিতে পারি, তাহলে মার্চ মাসের মধ্যেই মুনির ভাইকে সব চ্যাপ্টারের ফার্স্ট ড্রাফট দিয়ে দেয়া যাবে। দেখা যাক, কি হয়!

কয়েকদিন আগে আর্ট থিওরির একটা বইয়ের অনুবাদ-এর কথা লিখেছিলাম নাকি? মনে পড়ছে না। কথা হচ্ছে যে, এই বইটার অনুবাদের কাজ শেষ হলে ওই আর্ট থিওরির বইটার অনুবাদ নিয়ে বসবো। অনেকদিন আগে সাইকোলজির ইতিহাসের একটা বইয়ের অনুবাদের কাজ শুরু করেছিলাম। যখন ওই কোর্সটা চলছিলো, তখন মূল ইংরেজি বইয়ের বাংলা ভার্সনটা পড়তে গিয়ে আমার এমনই জিদ উঠেছিলো যে জোশের চোটে নিজেই তখন একটা চ্যাপ্টারের অর্ধেক অনুবাদ করে ফেলেছিলাম। অনুবাদ মানেই কি একেবারে লিটেরাল শাব্দিক অনুবাদ হতে হয়? তাও আবার তাত্ত্বিক বইয়ের? ইউনিভার্সিটিতে উঠে ছেলে-মেয়েরা ওইসব খটমট অনুবাদ পড়ে কিছুই বোঝেনা, তারপর ‘বোরিং’ বলে ওই সাবজেক্টটাকে সিল মেরে দেয়। সো  ঐ বইটার কাজও একসময় হয়তো ধরবো। অবশ্য স্কুল লেভেলেও বই-পত্রের একই অবস্থা! আমি যে বাংলাদেশ স্টাডিজ পড়াই, ওইটার যে বইটা ফলো করা হচ্ছে, সেটা পড়তে গেলেই বোঝা যায় যে বাংলা একটা টেক্সট থেকে একেবারে শাব্দিক ইংরেজি করেছে! আর সে কারণে লেখার ভাষাটাও ইন্টেরেস্টিং হয় নাই, আর সে কারণে স্টুডেন্টরাও পড়তে আগ্রহ পায় না। বাংলাদেশের ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোর জন্য কি কেউ চাইলেই সহজ ইংরেজিতে একটা মৌলিক বই লিখতে পারে না? কি জানি! কোনো একসময় হয়তো আমার নিজেরই প্রচন্ড জিদ উঠবে, আর তখন নিজেই একটা আস্ত বই লিখতে শুরু করে দেবো!

আজকে সন্ধ্যায় ইএমকে সেন্টারে একটা পারফর্মেন্স দেখতে গিয়েছিলাম। শরীফ ভাইয়ের অর্কেস্ট্রা টিম-এর পারফর্মেন্স – রহম আলীর পুতুল নাচ। বেশ ভালো লাগলো। ২০১৪ সালে যখন প্রথমবার হয়েছিলো, তখন যেতে পারিনি। কি কি জানি কাজ ছিলো। আজকেরটা আর মিস করলাম না। অবশ্য নিজের ভায়োলিন ক্লাসেই অনেক গ্যাপ পড়ে যাচ্ছে। ভায়োলিন ক্লাসের ইরেগুলারিটি দূর করার প্রজেক্টে নামতে হবে সামনে। আগে অনুবাদের কাজটা শেষ হোক!

যাই হোক, আজকে আর লিখবো না। আবারো ক্যান্ডি ক্রাশ এর নেশা মাথায় উঠেছে দিয়ে চাড়া! গেম খেলে সময় কাটাই কিছুক্ষণ। ইদানীং আরেকটা গেম-ও খেলছি। কাট দ্য রোপ। ইদানীং ঘুম আসার প্রক্রিয়া হিসেবে বিছানায় শুয়ে মোবাইলে গেম খেলতে শুরু করি …

অক্কে … আজকের মতো শেষ …

Leave a comment